বিয়ে নিয়ে সমাজে প্রচলিত কুপ্রথা
লিখেছেন লিখেছেন বাংলা মায়ের দামাল ছেলে ২৭ মার্চ, ২০১৫, ০৭:১৩:১১ সন্ধ্যা
বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিবাহ করা
নবীগণের (আলাহিসসালাতু আসসালাম)
সুন্নাত।
রাসুল(সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেছেনঃ
যে বাক্তি বিয়ে করার সামর্থ্য থাকা
সত্ত্বেও বিয়ে করে না, সে আমার
উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
(দারিমী-কিতাবুন নিকাহ, ইবনে মাজাহ)
মহান আল্লাহ্কে বিয়েকে দুর্গ বলেছেন,
কেননা বিয়ে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে সকল
প্রকার লজ্জাজনক কাজ থেকে
দুর্গবাসীদের মতই বাচিয়ে রাখে।
অপর হাদিসে বিবাহকে দ্বীনদারীর
অর্ধেক বলা হয়েছে। তাহলে বুঝাই
যাচ্ছে এর দ্বারা মানুষ তাঁর ঈমান-আমল
কীরূপে হিফাজত করতে পারে।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই পবিত্র কাজটি
সম্পাদন করতে গিয়ে আমাদের সমাজের
অজ্ঞ-মূর্খ মুসলিমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে
বিভিন্ন কু-প্রথায় লিপ্ত হয়ে যায়।
এবং এর দ্বারা তারা বিভিন্ন পাপে
লিপ্ত হয়, বিভিন্ন হারাম, বিদআত,
অশ্লীল, বিজাতীয় আবার কখনো
শির্কের মত মারাত্মক পাপে লিপ্ত হয়।
বিবাহে প্রচলিত কু-প্রথা:
১. কনে-কে ইজাব-কবুল পড়ানো হয়, অথচ
পড়াতে হবে বরকে। এটাই হচ্ছে সঠিক
নিয়ম, কিন্তু বর্তমান যুগের কুলাঙ্গার
মুসলিমরা রাসুল (সাঃ) এর নিয়মকে
উল্টে দিয়েছে।
২. পাত্রী নিজে পাত্রকে সরাসরি
প্রস্তাব দেওয়াটা নাজায়েয বলে মনে
করা।
অথবা পাত্রী পক্ষ থেকে প্রস্তাব
পাঠানোকে দোষের কিছু মনে করা।
কিন্তু অবাধে তাদের ছেলে-মেয়ে প্রেম
করে বেড়াচ্ছে, এটা তাদের কাছে
সহনশীল।
অথচ ইসলামী শরিয়াতে পাত্রী নিজে
অথবা পাত্রী পক্ষ থেকে প্রস্তাব
পাঠানোর ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা
নেই।
৩. বিবাহের পূর্বে পাত্র-পাত্রীর
একসাথে ঘুরতে যাওয়া। অথচ তারা
এখনো স্বামী-স্ত্রী হয় নি।
আর এভাবে তারা অনেক সময় অনৈতিক
কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরে। অনেক সময়
বিয়ে ভেঙ্গে যায়, তাহলে তাদের এই
ঘুরতে যাওয়া কি তাদের চরিত্র দাগ
ফেলে দিল না?
পক্ষান্তরে তারা মেয়ের একজন
মাহরামের উপস্থিতিতে সকল কথাবার্তা
ভেঙ্গে বলে নিবে, এখানে লুকিচুরি বা
লজ্জার কিছুই নেই।
নারীদের বিয়ের ক্ষেত্রে বর্তমানে
আমাদের আধুনিক সমাজে অধিকাংশ
ক্ষেত্রেই তাদের ইচ্ছার কোন মূল্যায়ন
করা হয় না। তার পছন্দ-অপছন্দের কোন
মূল্যায়ন করা হয় না। মেয়েদের পিতার
ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিতে হয়। কিন্তু
ইসলামে নারীদের পছন্দ-অপছন্দের
ইচ্ছাকে নিশ্চিত করা হয়েছে। ইসলামে
বাবা জোর করে কখনোই বিয়ে দিতে
পারবে না। ইসলামে অবশ্যই মেয়ের
মতামত নিতে হবে, নইলে বিয়েই হবে না।
এপ্রসঙ্গে একটি হাদিস রয়েছে- একদা
এক মহিলা সাহাবি রাসুল (সাঃ) এর
কাছে এসে অভিযোগ করলেনঃ আমার
বাবা যার সাথে আমার বিয়ে দিয়েছেন
তাকে আমার পছন্দ নয়। তখন রাসুল (সাঃ)
সঙ্গে সঙ্গে সেই বিয়ে বাতিল করে
দিলেন। (সহিহ বুখারি ৭ম খণ্ড, নিকাহ
অধ্যায়)
ইসলামে এটা আবশ্যিক যে ছেলে মেয়ে
উভয়ের পছন্দ থাকতে হবে। নইলে বিয়ে
হবেনা। কিন্তু বর্তমানে অনেক আধুনিক
পরিবারেই মেয়ের বিয়ের জন্য তার
পছন্দের কোন খেয়াল করা হয় না। কিন্তু
ইসলামে তাকে এ ব্যাপারে পূর্ণ
অধিকার দিয়েছে।
৪. যৌতুক মত নির্লজ্জ হিন্দুয়ানী কু-
প্রথার অনুসরণ করা। যে ছেলে তার
বউয়ের কাছ থেকে যৌতুক নেয় সে একটা
কা-পুরুষ।
৫. বিবাহ উৎসবে অথবা অন্য যে কোন
উৎসবে পটকা-আতশবাজি ফুটান,
অতিরিক্ত আলোকসজ্জা করা, নারী-পুরুষ
অশালীনভাবে একে অপরকে রঙ দেওয়ার
ছড়াছড়ি ইসলামের
দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অবৈধ, অশ্লীল কাজ ও
অপচয়। এদের উচিৎ আল্লাহ্কে ভয় করা।
আল্লাহু-তা’য়ালা বলেনঃ
“নিশ্চয় অপচয়কারী শয়তানের ভাই। আর
শয়তান হচ্ছে তার রবের প্রতি বড়-ই
অকৃতজ্ঞ।” (সুরা বানী ইসরাঈলঃ ২৭)
৬. কুলায় করে চন্দন, মেহদি, হলুদ, কিছু
ধান-দূর্বা ঘাস, কিছু কলা, সিঁদুর ও মাটির
ছোট ঘটি নেওয়া হয়। মাটির ঘটিতে তেল
নিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। স্ত্রী ও বরের
কপালে তিনবার হলুদ লাগায় এমনকি
মূর্তিপূজার ন্যায় কুলাতে রাখা আগুন
জ্বালানো চাটি বর-কনের মুখের সামনে
ধরা হয় ও আগুনের ধুঁয়া ও কুলা হেলিয়ে-
দুলিয়ে বাতাস দেওয়া হয়। এসব
হিন্দুয়ানী কু-প্রথা ও শির্কের সাদৃশ্য
কাজ।
৭. বউকে সাজিয়ে সকলের সামনে
বসিয়ে রাখা হয়, ঐ মেয়ে এমন লোকেরা
দেখতে থাকে যাদের সাথে দেখা করাও
হারাম। এভাবে ঐ মেয়েকে সকলে
পাইকারী হারে বধূ-দর্শনের নামে চোখ
দ্বারা ধর্ষণ করে উপভোগ করে থাকে।
৮. বরের পুরুষ কোন আত্মীয়, বিশেষ করে
দুলাভাই নতুন বউকে কোলে তুলে বাসর ঘর
পর্যন্ত পৌছে দেওয়া হয়, এমন নীতি
একটি বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা ও কু-
প্রথা ছাড়া আর কিছুই নয়।
৯. বরের ভাবী ও অন্য যুবতী মেয়েরা
বরকে সমস্ত শরীরে স্পর্শ করে হলুদ
মাখিয়ে গোসল করিয়ে দেওয়া নির্লজ্জ
কাজ, নারী-পুরুষের এহেন মিলামেশা
যারা করে তাদের উচিৎ জাহান্নামের
আগুমের কথা চিন্তা করা।
১০. শ্বশুর-শাশুড়ি বা মুরুব্বীদেরকে পায়ে
ধরে সালাম করার প্রথা একটি
বিজাতীয় কু-প্রথা। এটি শির্ক।
এমন আরো অনেক কু-প্রথা আমাদের
মুসলিম নামধারী সমাজে প্রচলিত আছে।
এরা নামে তো মুসলিম কিন্তু কাজে-
কর্মে এরা হিন্দু-খ্রিষ্টানদেরকেও হার
মানিয়েছে।
মুসলিমরা যদি আল্লাহ্ ও পরকালে
বিশ্বাসী হয়, জান্নাতের আশা রাখে
এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চায় তবে
মুসলিমদের উচিৎ বিবাহ-শাদী সহ
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কুরআন-
সুন্নাহয় কি বিধান দেয়া আছে তাঁর
অনুসরণ করা।
=> কুরআন-সুন্নাহর বাইরে গিয়ে কোন
কাজ করার অর্থ হচ্ছে নিজেই নিজেকে
জাহান্নামে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর হা, আমি বিয়ে করতে চাই, কিন্তু টাকা দিবেন আপনি!!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন